নিজস্ব প্রতিবেদক | নতুনআলো টোয়েন্টিফোর ডটকম
প্রকাশিত: 2023-12-05 09:30:06 BdST হালনাগাদ: 2024-04-13 18:37:28 BdST
নারী উদ্যোক্তা ও সংগঠক সংগীতা খান মারা গেছেন
নারী উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কোষাধ্যক্ষ ফারখুন্দা জাবিন খান ওরফে সংগীতা খান (৬২) মারা গেছেন। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ১১মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি কান্সারে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বাদ আসর গুলশান সোসাইটি মসজিদে মরহুমার নামজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
সংগীতা খান দেশের শীর্ষ আবাসন কোম্পানি বিটিআই'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান খানের (এফআর খান) স্ত্রী, আবাসন কোম্পানি বিল্ডিং ফর ফিউচার'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীরুল হক প্রবাল ও সঙ্গীত শিল্পী সুমনা হকের বড় বোন। কবি খালেদা এদিবের বড় মেয়ে।
সংগীতা খান বনানীতে অবস্থিত রূপচর্চা প্রতিষ্ঠান ডিভাইন বিউটি লাউঞ্জের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ও টাইম আউট রেস্তোরাঁর অংশীদার।
সফল ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী উদ্যোক্তা সংগীতা খান ১৯৮৯ সালে কর্মজীবন শুরু করেন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে। টিকেটিং এন্ড রিজার্ভেশন বিভাগের সুপারভাইজর ছিলেন তিনি। রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত টাইম আউট রেস্টুরেন্ট’র অংশীদার (পার্টনার) হওয়ার মধ্য দিয়ে ২০০৫ সালে তিনি প্রথম উদ্যোক্তা হন। ২০০৮ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ছেড়ে দেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনি রিজেন্সি ট্রাভেলস’র বিপণন পরিচালক (মার্কেটিং ডিরেক্টর) পদে যোগ দেন। দায়িত্ব পালন করছেন এখনো। ২০১২ সালে সংগীতা খান যুক্ত হন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (বিডাব্লিউসিসিআই) সঙ্গে। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির পর্ষদ পরিচালক (বোর্ড ডিরেক্টর) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এফবিসিসিআই) সাধারণ পর্ষদ সদস্য (জেনারেল বডি মেম্বার), ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (আইবিসিসিআই) পরিচালক, বাংলাদেশ-নেপাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও জার্মান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (জিবিসিসিআই) সদস্য।
সংগীতা খানের জন্ম ১৯৬১ সালের ৪ জুলাই। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে। আদি বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ। বাবা আনোয়ারুল হক। বাংলাদেশ বস্ত্রকল কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) অর্থ পরিচালক (ফিন্যান্স ডিরেক্টর) ছিলেন তিনি। মা বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রয়াত কবি খালেদা এদিব চৌধুরী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সংগীতা বড়। ভাই প্রকৌশলী তানভীরুল হক প্রবাল আবাসন কোম্পানি বিল্ডিং ফর ফিউচার’র (বিএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বোন সঙ্গীতশিল্পী ও চিত্রশিল্পী সুমনা হক। সংগীতার বাবা ১৯৯৪ সালে এবং মা ২০০৮ সালে মারা যান।
সংগীতার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার হাতেখড়ি শুরু হয় সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার স্কুলে। ১৯৭৮ সালে ভিকারুননিসা নুন স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। হলিক্রস কলেজ থেকে তিনি ১৯৮০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসন বিভাগে ১৯৮৪ সালে স্নাতক ও ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি কর্পোরেট লিডারশিপ বিষয়ে জাপানে তিন সপ্তাহব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন। চলতি বছরের ৮ মার্চ তিনি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ‘ইয়েলো ইন্সপায়ারিং ফিমেল অ্যাওয়ার্ড’ নামে একটি পুরস্কার পেয়েছেন। চামড়া প্রযুক্তি স্নাতকদের (লেদার গ্রাজুয়েট) নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান এলটিএসই-কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের একটি ফ্যাশন শোতে ডিভাইন বিউটি লাউঞ্জ এরই মধ্যে বিউটি পার্টনার হয়েছে এ বছরের এপ্রিলে।
সংগীতা খান ১৯৭৯ সালে প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান খানকে বিয়ে করেন। ফয়জুর রহমান খান দেশের আবাসন শিল্পের একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। তিনি আবাসন প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং টেকনোলজি এন্ড আইডিয়াস’র (বিটিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে নাবিলা জাবীন খান, ছেলে ইফাজ রহমান খান।
এক নজরে সংগীতা খান
১৯৬১ জন্ম (৪ জুলাই), পৈতৃক বাড়ি বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী।
১৯৭৮ মাধ্যমিক, ভিকারুননিসা নুন স্কুল
১৯৮০ উচ্চমাধ্যমিক, হলিক্রস কলেজ
১৯৮৪ স্নাতক, জনপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৮৭ স্নাতকোত্তর, জনপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭৯ বিয়ে, স্বামী ফয়জুর রহমান খান
১৯৮৯ কর্মজীবন শুরু, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
২০০৫ ব্যবসায় যাত্রা, টাইম আউট রেস্তোরাঁয় অংশীদার
২০০৮ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ছেড়ে দেন
২০০৯ রিজেন্সি ট্রাভেলস’র বিপণন পরিচালক (মার্কেটিং ডিরেক্টর) পদে যোগ দেন
২০১২ নারীদের ব্যবসায়িক সংগঠন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (বিডাব্লিউসিসিআই) সঙ্গে যুক্ত হন
২০১৪ নিজের ব্যবসা শুরু, রূপচর্চা স্যালন ডিভাইন বিউটি লাউঞ্জ
২০১৫ কর্পোরেট লিডারশিপ বিষয়ে জাপানে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন
২০১৬ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ‘ইয়েলো ইন্সপায়ারিং ফিমেল অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার লাভ
২০২৩ প্রয়াত হন (৫ ডিসেম্বর)