সোমবার । অক্টোবর ১৪, ২০২৪ । । ১০:১৯ এএম

রূপনগর থানা

রূপনগরে মাদক ও নারী নির্যাতনে আসামী নারী-পুরুষ উভয়েই হচ্ছেন: ওসি আবুল কালাম আজাদ

সৈনূই জুয়েল | নতুন আলো টোয়েন্টিফোর ডটকম
প্রকাশিত: 2021-03-24 18:14:48 BdST হালনাগাদ: 2021-04-22 13:07:15 BdST

Share on

মো. আবুল কালাম আজাদ, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, রূপনগর থানা।

মো. আবুল কালাম আজাদ। রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। তিনি এই থানায় যোগ দিয়েছেন ১০ জুন ২০১৯।


রূপনগর থানার নানা বিষয় নিয়ে নতুন আলো টয়েন্টিফোর ডটকমের একান্ত সাক্ষাৎকারে মো. আবুল কালাম আজাদ কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈনূই জুয়েল।


রাজধানীতে রূপনগর থানার যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল। এটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৬তম থানা।

রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ
রূপনগর এলাকার অপরাধ ও অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ থানায় আমি এসেছি প্রায় দুই বছর। এখানে মূলত দুটি অপরাধ বেশি- মাদক ও নারী নির্যাতন। মাদক অপরাধ ও নারী নির্যাতনে নারী ও পুরুষ উভয়ই প্রায় সমান সম্পৃক্ত। এ সংক্রান্ত মামলাগুলোতে পুরুষ যেমন আসামি হচ্ছেন, তেমনি নারীরাও হচ্ছেন। মাসে ১৫ থেকে ২০টি মাদক মামলা আর ৫ থেকে ৭টি পারিবারিক সহিংসতার জেরে নারী নির্যাতন মামলা হয়। এছাড়া প্রতি মাসে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সংখ্যা ৪ শতাধিক।


চিহ্নিত মাদক স্পট নেই
এলাকার মাদক স্পট ও মাদক মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রূপনগরে এখন চিহ্নিত মাদক স্পট নেই। তবে মাদকের ভাসমান বেচাকেনা আছে। সেসব নিয়ে মামলা হচ্ছে, অপরাধীদের সাজা হচ্ছে। এক এলাকার মাদক বিক্রেতা আরেক এলাকায় গিয়ে মাদক বিক্রি করে- এমন ঘটনাও হরহামেশা ঘটছে।

রূপনগর থানা
কিশোর গ্যাং বা দলবদ্ধ কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি আবুল কালাম আজাদ নতুনআলো টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন এ থানায় বিচ্ছিন্নভাবে কিশোর অপরাধী আছে, তবে কিশোর গ্যাং নেই।


বিট পুলিশিংয়ের আওতায় আমরা এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি, অভিভাবকদের সচেতন করছি। আমার থানার অধীনে ৪টি বিট সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। প্রতিমাসে এলাকাবাসীর সঙ্গে উঠান বৈঠকের আয়োজন করছি।


থানার জনবল পর্যাপ্ত, সংকট নেই
থানার জনবল সংকট বা অন্যান্য সংকট আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার থানা এলাকার আয়তন অনুযায়ী থানার জনবল সংকট নেই। তাছাড়া থানার পরিবহন যানেরও সংকট নেই।

ওসি আবুল কালাম আজাদ
থানায় ৩ জন পরিদর্শক, ৫০ জন উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক, ৫০ জন আনসার সদস্যসহ মোট জনবল ১১০। গাড়ি আছে ৬টি। ব্যারাকের সক্ষমতাও পর্যাপ্ত।


রূপনগরের আলোচিত মামলা ও ফলাফল
২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর রূপনগর আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ গ্যাস বেলুন বিক্রেতার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ৮ জন মারা যায়। এ ঘটনায় অপরাধজনক নরহত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় গ্যাসবেলুন বিক্রেতা আবু সায়ীদ ছিলেন আসামি। যদিও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে- এটি মূলত দুর্ঘটনা ছিল।


আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি দুর্ঘটনা হলেও এটি নজিরবিহীন মর্মান্তিক ঘটনা ছিল। এ ঘটনা ভীষণ মর্মাহত করেছে।


তিনি বলেন, ২০২০ সালে রূপনগরের দুয়ারিপাড়া মোড়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৩০ একর জমি বেদখল হয়ে ছিল। কোন রকম ক্যাজুয়াল্টি ছাড়া ৫ দিনের অভিযানে এ জমি উদ্ধারের কাজটিও ছিল বড় কাজ।

ওসি আবুল কালাম আজাদ
বেশ কিছুদিন আগে অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকীর একটি স্মার্টফোন মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ছিনতাই হয়, সেটি আমরা দ্রুত উদ্ধার করতে পেরেছি। এমন নানা ঘটনা, অপরাধ ও প্রতিকার অহরহই ঘটছে, উল্লেখ করেন রূপনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ।


রূপনগর থানার একটি চাঞ্চল্যকর মামলা নুরুল ইসলাম গাজীর (৫০) নিখোঁজ, অপহরণ ও 'লাশের সন্ধান'। নুরুল গাজী ২০২০ সালের ১ নভেম্বর নিখোঁজ হন, ৪ নভেম্তাবর তার স্ত্রী রহিমা বেগম (৪০) রূপনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রূপনগর বেড়িবাঁধের পাশে একটি ফিলিং স্টেশনের পেছন থেকে এক ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে রহিমা বেগম এটিকে তার স্বামীর কঙ্কাল বলে চিহ্নিত করেন।


আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা এ মামলাটিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছি। মামলায় অভিযুক্ত ৪ আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করেছি। এখন উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি নুরুল গাজীর কিনা তা বলতে পারবো সিআইডির কাছ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর। সেটি পেতে সময় লাগবে।

ওসি আবুল কালাম আজাদ
দুই দশকের পুলিশ জীবন
পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কালাম আজাদ ২০০১ সালে পুলিশে যোগ দেন নেত্রকোনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে। ২০১১ সালে তিনি পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। দেশের বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালে তিনি পরিদর্শক হিসেবে প্রথমবারের মত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হন- দায়িত্ব পান গাজিপুরের টঙ্গি থানার। নরসিংদীর পলাশ ও শিবপুর থানারও তিনি ওসি ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলি হয়ে আসেন- দায়িত্ব পান রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে।


একনজরে মো. আবুল কালাম আজাদ

  • ২০০১ পুলিশে যোগদান। উপ-পরিদর্শক, নেত্রকোনা সদর থানা।
  • ২০১১ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি; পদায়ন গাজীপুর সদর থানা।
  • ২০১৩ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), টঙ্গী থানা।
  • ২০১৫ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), পলাশ থানা, নরসিংদী।
  • ২০১৮ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), শিবপুর থানা, নরসিংদী।
  • ২০১৯ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), রূপনগর থানা, ডিএমপি।

ওসি আবুল কালাম আজাদ
মো. আবুল কালাম আজাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৭৬। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা করেছেন টাঙ্গাইলে। তিনি ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক, ১৯৯৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৯৫ সালে স্নাতক এবং ১৯৯৯ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০০১ সালে পুলিশে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৫ সালে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী গৃহিণী। তাদের দুই ছেলে।


২০০৭ সালে চট্টগ্রামের বদ্দারহাটে ৬ ডাকাত ধরার অভিযানে সাহসী ভূমিকার জন্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরুপ পেয়েছেন আইজিপি মেডাল।



  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত