বাংলাদেশের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ড. আকবর আলি খান। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। যোগদান করেছিলেন আমলা হিসেবে চাকরি জীবনে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে উনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তদকালিন মুজিব নগর সরকারের হয়ে কাজ করতেন উনি। তাঁর অনুপস্থিতিতে সেসময়ের পাকিস্তান সরকার উনাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছিল। ডক্টর আকবর আলি খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন উনি।
বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বশীল পদে কাজ করেছেন বেশ কয়েক বছর। অর্থনীতিকে উনি সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের আপামর জনতার জন্য। পক্ষপাতিত্বহীন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে উনি নির্ভয়ে সঠিক ও সত্য কথা বলেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কন্ঠ।
এই মানুষটির মৃত্যুতে আমি আবেগপ্রবণ। কারণ উনি আমার আব্বার বাল্যবন্ধু। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে একসাথেই ছাত্র ছিলেন উনারা। কর্মক্ষেত্রে উনারা বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আব্বার বন্ধু হিসেবে আমার জন্মের পর থেকে আকবর আলি খান চাচাকে চিনি আমি। ৯০ এর দশকে দেখতাম আব্বা অফিস থেকে এসে চলে যেত তাঁর বন্ধুর সেই বিজয়নগরেরে বাসায়। বন্ধুর সাথে গল্প-আড্ডা সেরে বাসায় ফিরতো। আব্বার ডাকনাম মজনু আর চাচার খসরু। এলাকার বয়োজেষ্ঠ্যদের মাঝে এই দুজনকে সবাই প্রাণের বন্ধু হিসেবেই জানতো। আজ উনারা কেউ নেই। আছে উনাদের স্মৃতি।
| ড. আকবর আলী খান, ইল্লিনা হক বৈতরণী। ২০১৮ সালে ড. আকবর আলী খানের গুলশানের বাসায় তোলা ছবি।
মনে আছে- আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই, চাচা খুব খুশি হয়ে আমাকে শুভকামনা জানিয়ে ছিলেন, উৎসাহ দিয়েছিলেন। আব্বা-আম্মার অসুস্থতা বা যেকোন প্রয়োজনে আমরা চাচীর (আকবর আলি খানের স্ত্রী) সাথে যোগাযোগ করতাম। উনারা আমাদের পাশে থাকতেন।
২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে যখন আম্মা চলে গেল, চাচা দেশে ছিলেন না। অসুস্থ চাচী গভীর রাতে সর্বপ্রথম আমাদের কাছে এসেছিলেন। আব্বার শেষ সময়ে চাচা তাঁর বাল্যবন্ধুর মেয়েদের সান্ত্বনা দিতে আসতে প্রায়ই ছুটে আসতেন হাসপাতালে।
চাচার সাথে আমার শেষবার দেখা হয় ২০১৮ সালে। আমার এক বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে দেশে গিয়েছিলাম। মেয়েটার শরীর ভালো ছিলোনা, তাও কিছুটা সময় আমি, আমার স্বামী আর আমার মেয়ে ছিলাম উনার সাথে। উনি লেখালেখি করতেন। আমার বোনকে উনার লেখা অর্থনীতি নিয়ে দুইটি বই উপহার দিয়েছিলেন। আমি অর্থনীতির ছাত্র, আগ্রহ করে বইগুলো এনে রেখেছি আমার কাছে।
চাচার প্রস্থানে আজ মনে হচ্ছে আমি, আমার বোন অভিভাবকশূন্য হয়ে গেলাম। শুধু তাই নয় বাংলাদেশও একজন সৎ, নিষ্ঠাবান মানুষ এবং দেশপ্রেমিক হারালো। প্রিয় চাচা, সর্বদা আপনি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অন্তরে লালিত হবেন। আপনার শূন্যতা পূরণ হবার নয়। যেখানেই থাকবেন, ভালো থাকবেন, চাচা।
ইল্লিনা হক বৈতরণী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কেয়ার অ্যাক্রস কমিউনিটিস (একটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা)