একই দেহে দু বোনের কেটে গেছে ১৬ বছর। আর দশটা কিশোরীর মতই তাদের ভাবনা-চিন্তা আর কাজকর্ম। কিন্তু নানা কারণেই তাদের বেঁচে থাকায় বিড়ম্বনা হয়ে বাঁধ সেধেছে তাদের শরীর। এই দুই বোনের নাম কারমেন ও লুপিতা আন্দ্রেদ। তারা সংযুক্ত যমজ (কনজয়েন্ড টুইন্স)। চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় তারা ওমফ্যালোপেগাস টুইন্স (Omphalopagus Twins)। তাদের জন্ম মেক্সিকোতে হলেও তারা আমেরিকার অভিবাসী। পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছে কানেক্টিকাটে।

যেখানে বেশিরভাগ সংযুক্ত যমজ জন্মের কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যায়, সেখানে তারা দিব্যি হেসে খেলে কাটিয়ে দিয়েছে ১৬ বছর। ভালোই যাচ্ছিল তাদের দিন। কিন্তু চিকিৎসকের কাছ থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা হবার কথা শুনেই ভেঙ্গে পড়েছে তারা। তারা একই দেহ নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়।

কারমেন আর লুপিতার একটি করে পাঁজর, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, রেচন অঙ্গ ও প্রজনন অঙ্গ রয়েছে। তাদের পাঁজর থেকে শরীরের বাকি অংশ (চেস্ট ওয়াল টু পেলভিস) একটি দেহসদৃশ। তবে তাদের দুটি করে হাত থাকলেও দুজনের রয়েছে এক জোড়া পা। কারমেন ডান পা আর লুপিতা বাম পা নিয়ন্ত্রণ করে। চার বছর বয়সে তারা হাঁটতে শেখে। তার পর থেকেই তারা পায়ে পায়ে এগিয়েছে। জন্মের পরেই ডাক্তাররা তাদের আলাদা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতে বিপদের সম্ভাবনা ছিল বলে করা হয়ে ওঠেনি।

চিকিৎসকরা বলছেন, দুজনের মধ্যে লুপিতা স্কোলিওসিসে আক্রান্ত, যার ফলে তার ফুস্ফুস ৪০ ভাগ কাজ করে। সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে কষ্ট হয় তার। এই সময়ে তাদের আলাদা না করলে বিপদ দেখা দিতে পারে দুজনেরই।
কিন্তু সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কারমেন আর লুপিতা দু’জনেই জানিয়েছে, তাদের এই অস্ত্রোপচারে মত নেই। কারণ, তারা এই ১৬ বছর ধরে যে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, তাতে তারা পরস্পর থেকে আলাদা হলে মানসিকভাবেই ভেঙে পড়বে।

অস্ত্রোপচারে ভয় ছাড়াও আর একটা ভয় কারমেন আর লুপিতার পরিবারকে তাড়া করছে। এই পরিবারটি মেক্সিকো থেকে আগত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেক্সিকান শরণার্থী-সংক্রান্ত বিরোধিতা তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যেকোনো দিন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ আসতে পারে, এই ভেবে চিন্তিত কারমেন আর লুপিতা আন্দ্রাদের পরিবার। আমেরিকা ছাড়লে সেখানকার চিকিৎসা পরিসেবা থেকে বঞ্চিত হবে কারমেন ও লুপিতা। সেই বিপদের দিনে কী হবে ভেবে শঙ্কিত তাদের পরিবার। সুত্রঃ দ্য সান